সুখ ও দুঃখ - কাহলিল জিবরান
তোমার সুখ তোমার দুঃখের ছদ্মবেশ বর্জিত রূপ।
যে কূপ থেকে
তোমার হাসি উঠে আসে সেই কূপ প্রায়ই তোমার
দুঃখের অশ্রুতে ভরা থাকে।
তাছাড়া আর কি
হতে পারে?
সেই দুঃখের
আঘাতে তোমার অন্তরের ক্ষত যত গভীর হয় তত বেশি সুখ তুমি ধরে রাখতে পার।
কারন যে
পানপাত্র তোমার মদিরা ধারন করে তা কি কুমোরের চুল্লিতে পোড়ানো সেই পানপাত্র নয় ?
এবং যে বীণার
তানে তোমার চিত্ত প্রশান্ত হয় তা কি ছুরির ঘায়ে খোদাই হওয়া সেই কাঠের গুড়ি নয় ?
তুমি যখন
আনন্দে উল্লাসিত হও তখন তুমি তোমার অন্তরের গভীরে তাকিয়ে দেখ- দেখবে যা তোমাকে
দুঃখ দিয়েছিল তাই তোমাকে সুখ দিচ্ছে।
তুমি যখন
দুঃখে ভারাক্রান্ত হও তখন তুমি আবার তোমার অন্তরের গভীরে তাকিয়ে দেখ- দেখবে যা
তোমার আনন্দের উৎস ছিল তুমি আসলে তার কারনেই কাঁদছ।
অনেকে বলে,
‘সুখ দুঃখ থেকে মহীয়ান’, আবার অনেকে বলে, ‘না, দুঃখই মহীয়ান’।
কিন্তু আমি
বলি, তারা অবিচ্ছেদ্য।
তারা একত্রে
আসে এবং তাদের একজন যখন একাকী এসে তোমার সঙ্গে একাসনে বসে, তুমি মনে রেখ, তখন
অপরজন তোমার শয্যায় শুয়ে আছে।
নিশ্চয় তুমি তোমার সুখ এবং তোমার দুঃখের মাঝে
দাঁড়িপাল্লার মতো ঝুলে আছে।
তুমি যখন সর্বশূন্য কেবল তখনই তুমি ভারসাম্যে স্থির।
ভাণ্ডার-রক্ষক যখন তার স্বর্ণ এবং রৌপ্যের পরিমাপে
তোমাকে তুলে ধরবে তখন তোমার সুখ-দুঃখের পাল্লাও কি উঠা-নামা করবে ।