গ্রামগুলো একদিন মরে যাবে...
গ্রামগুলো একদিন ঠিকই
মরে যাবে আমাদের অবহেলায়।
এই তুমি দোষ দেবে আমাকে, আমি তোমাকে, আমরা আমাদেরকে-
তারপরেই ফিরে যাব মৃত
গ্রামগুলোতে, যাকে আমরা এখন শহর বলে জানি।
এসো, সে শহরের পার্লামেন্টে
দাঁড়িয়ে একমিনিট নীরবতার শোক প্রকাশ করি।
তুমি দামি গাড়ি হাকিয়ে
চলবে তেপান্তরের মত বিশাল প্রশস্ত রাস্তায়,
নদীগুলোকে পরিনত করা
হবে পীচঢালা পাকা রাস্তায়।
মাঝিদের হাতে তুলে
দেয়া হবে রিক্সা-গাড়ি-যান্ত্রিক যান
পাল তোলা নৌকারা পরে
থাকবে জাদুঘরে-মিউজিয়ামে-পুরনো কবিতায়।
টিনের চালের টাপুর- টুপুর বৃষ্টির ছন্দ... বাতাসেরগর্জন...
টিনের চালের ঘর কোথায়
থাকবে বল-
তোমার চাহিদার কাছে
ওগুলো হয়ে যাবে পাকা বসত বাড়ি-ফ্লাট-অট্টালিকায়।
দিগন্ত বিস্তৃত শস্যখেতগুলো
হয়ে যাবে ইন্ডাস্ট্রি-কারখানা
কৃষকদেরকে পরিনত করা
যাবে কারখানার শ্রমিক।
খাল-বিল-পুকুরের মাছগুলোকে
করে দেয়া যাবে অ্যাকুরিয়ামের বাসিন্দা।
পাখীগুলোকে বারান্দার
খাঁচায় পোষা যাবে,
জোনাকির দল না হয় জ্বলে
জ্বলে নিভে যাবে বিজ্ঞাপনের বিলবোর্ডে।
পুরাকালের গাঁয়ের বঁধুরা
সব হয়ে যাবে আধুনিকা
কিশোরীর খোঁপার কদম
ফুল হারিয়ে যাবে-
কানামাছি-গোল্লাছুট-মার্বেল-ডাংগুলি…
সময়গুলোকে বদলে দেয়া
হবে-
কৈশোরের দুরন্ত সময়গুলোকে
বেঁধে রাখা হবে গণকযন্ত্রের বাক্সে।
পাড়ায় পাড়ায় ছেলে-ছোকরাদের আড্ডা
ক্লাব-ক্যারাম বোর্ড-চায়ের দোকান-বতগাছতলা-ক্রিকেট
ছেলে-ছোকরাদের চোখে চশমা
তুলে দেয়া হবে-
এখানে সেখানে গড়ে তোলা
হবে সাইবার ক্যাফে -সেমিনার-সিম্ফজিয়াম।
গ্রামগুলোকে একদিন
মরে যেতে হবেই।
গ্রামগুলো একদিন মরে
যাবে সভ্যতার কাছে।
এসো, আমরা দাঁড়িয়ে একমিনিট
নীরবতা পালন করি।
(রচনাকালঃ ২০১৩, রিয়াদ)