My Personal Blog ...

বিষের মোহময়িতা



পথ ভূলে আমি আজ
ভূল পথে কিংবা দিগন্তের শেষ সমীরণে
হেঁটে চলেছি নিঃসঙ্গতায় একা।
কত দিন, কত রাত; কত মাস বৎসরের হিসাব পেড়িয়ে
বন্ধুর পথে চলছি আমি।
আমার এ পথ চলার কোন শেষ নেই।
আর গন্ত্যব্য? হ্যাঁ, গন্ত্যব্য আছে
দিগন্ত যেখানে ভূমির সাথে মিশেছে-
সেখানেই আমার যাত্রার সমাপ্তি।


শহর-গ্রাম-লোকালয়- ভূমি পেড়িয়ে
একবার উপস্থিত হয়েছিলাম এক মরুদ্যানে।
বালুকাবেলায় সূর্যের স্বর্ণাভার ‘পরে
আকাশ ছোঁয়া সবুজ প্রকৃতিরাজ বেষ্টিত
এক স্বপ্নিল মায়াভিরাম সেই মরুদ্যান।
স্বর্ণাভার আলিঙ্গন ছাড়িয়ে স্বপ্নিল দৃষ্টিতে
অদ্ভুত দর্শন একটি বৃক্ষরাজির নিচে বসলাম।
বৃক্ষরাজি তার সমস্ত ভালোবাসার পরশ দিয়ে
আমাকে নিয়ে গেল এক সপ্নীল রাজ্যে।
যেখানে এক রাজকন্যার হাত ধরে
আমি চলছি সূর্যের শেষ আভার পিছু পিছু।

যখন নয়ন মেলে তাকালাম
তখন তৃষ্ণায় আমার ছাতি ফেটে যাচ্ছে।
আমার সামনে এক বিশাল জলধারা
যেখানে জলের উপর ঝিলমিল খেলা করছে।
জলধারার পাশে সমস্ত মরুদ্যানে
একটি মাত্র গোলাপ বৃক্ষে
একটি মাত্র রক্তাভ পুস্প ফুটে আছে।
অপূর্ব সেই মোহময়ী পুষ্পের হাতছানি
ব্যাকুল করে তুলল আমাকে।
গোলাপটি আমার চাইই চাই-
আমার জীবনের বিনিময়ে হলেও।
মরুদ্যানের শেষ সীমায় এক বিশাল অট্রালিকা
সেখান থেকে বিশাল দর্শন এক দানব
আমার সামনে এসে দাঁড়ালো।
আমি দানবের দিকে অনেকটা ভয়, অনেকটা করুনার দৃষ্টিতে তাকালাম।
দানব বলল-
‘ হে পথিক! তোমার মনের সব আমি অবগত।
কিন্তু তুমি দুটো জিনিস এক সাথে চাইতে পার না,
যে কোন একটি চাইতে হবে তোমাকে।
বল, কি চাই তোমার ?
এই পুস্পকধারার জল, নাকি ওই রক্তাভ একমাত্র গোলাপটি?
বল পথিক-
না হয় একটু চিন্তা করেই বল কোনটা চাই তোমার’।
আমি তৎক্ষণাৎ উত্তর দিলাম-
‘হে দৈত্যরাজ! আমি ওই জল চাই না।
জল পেলে হয়তবা আমি প্রানে রক্ষা পাব,
কিন্তু আমি আমার বহুদিনের লালিত স্বপ্ন
রক্তাভ ঐ গোলাপটি-
সামান্য  জলের বিনিময়ে পারবনা হারাতে।
না হয় ওই পুষ্পের কোলে মাথা রেখে
চলে যাব মৃত্যুর রাজ্যে’।
দৈত্যরাজ সামান্য বিচলিত হয়ে বলল-
‘পথিক ! তুমি কি ঠিক ভেবে বলছ এ কথা?
না হয় তুমি আরও এক বার ভাবো’।
আমি বললাম-
‘ হে দৈত্যরাজ! আমি ওই পুষ্পটিই চাই’।
‘ হে মূর্খ পথিক! তবে তাই হোক।
কিন্তু সাবধান। ঘূর্ণাক্ষরেও আর তাকাবে না জলের দিকে।
যদি আমার আদেশ অমান্য কর তবে-
তোমার ওই মস্তক দেহ থেকে বিচ্ছিন্ন করে
নিক্ষেপ করব জলধারায়।‘

দানব তার অট্রালিকায় চলে গেলে
আমি পা বাড়ালাম রক্তাভ পুষ্পটির উদ্দেশ্যে।
এখানে পাথরতুল্য শক্ত মিত্রিকা মৃত্তিকা।
সেখানে হোঁচট খেয়ে বারবার পড়ে যাচ্ছি
আবার উঠে চলছি দ্বিগুণ উৎসাহে।
এত দিনের লালিত স্বপ্ন আজ পূরণ হওয়ার পথে।
অবশেষে পুস্প বৃক্ষের নিকট পৌছালাম।
দূরদর্শনে গোলাপটি যত মোহময়ী ছিল, কাছে এলে দেখি আরও বেশি।
গভীর আবেগে ভালোবাসায়
গোলাপটিকে আমি স্পর্শ করতে চাইলাম; ছুঁয়ে দেখতে চাইলাম একটু
কিন্তু ছলনাময়ী গোলাপটি তার কাঁটার আঘাতে আমাকে রক্তাক্ত করে তুলল।
আমার শিরা-উপশিরায়, ধমনীতে-
বয়ে চলল তার বিষের নীল স্রোত।
একসময় আমি বেহুশ হয়ে
মুখ থুবড়ে পড়ে রইলাম তার পায়ের কাছে।

যখন হুশ হল
তখন আবিষ্কার করলাম
মরুভূমির বুকে রক্তাক্ত দেহ নিয়ে হেঁটে চলছি আমি।
আমার সামনে সোনালী দিগন্ত
দিগন্তের সেই মহময় হাতছানি...
তারপর আমি হেঁটেই চলছি, চলছি-
স্বপ্নীল দিগন্ত সমীরণের যাত্রায়।


(২০০০)