My Personal Blog ...

শেষ বেলায়

No comments :
আমার ঘরের কোনে পর্দা ঘেরা ছোট্ট একটি জানালা।
জানালা খুললেই প্রসারিত দিগন্ত
আর রক্তিম আভার একখণ্ড আকাশ।

আজ দু সপ্তাহ যাবৎ বিছানায় পড়ে আছি।
জগতের সমস্ত জনকোলাহল ছিন্ন করে
অব্যাক্ত বেদনা, চাওয়া-পাওয়াকে ছুটি দিয়ে
বাহিরের সবকিছু থেকে বঞ্ছিত এক রুমে
শুয়ে মৃত্যুর দুয়ার পদক্ষিনের অপেক্ষায়
আলিঙ্গন করছি শেষ বেলার সাথে।
বাবা মার সেই হাস্যজ্বল মুখ
কতদিন হয়ে গেল- এখন আর দেখতে পাই না।
আমার যে কি হয়েছে- কিচ্ছু জানি না, কিচ্ছু বুঝি না
বুঝতেও চাই না।

বাবা এখন সমস্ত মস্ত বড় বড় ডাক্তার-কবিরাজ খোজায় ব্যস্ত।
মা সর্বক্ষণ আমার বিছানার পাশে বসে থাকেন,
আর আচলে চোখ মূছেন- অশ্রু গোপন করেন।
সেবা- শশ্রুষার কোন কমতি নেই
এক জীবনের সমস্ত ভালোবাসা যেন
উজাড় করে দিতে চান একদিনেই।
শহরের নামি দামি ডাক্তার এসে রোজই আমায় দেখে যান
আর অভয়বানী শোনান, ‘ ভয় নেই, অল্পদিনের মধ্যো তুমি সুস্থ হয়ে উঠবে’।
কিন্তু আমি জানি, সে সোভাগ্য আমার হবে না।
কোন দিনই সুস্থ হব না আমি।
পৃথিবী তার কর্মক্ষেত্র থেকে আমাকে দিয়েছে ছুটি।

জানালার ‘পরে রক্তিম রক্তাভ আকাশ
যেন আমার প্রিয়ার মুখের প্রতিচ্ছবি।
ভোরের শিশির কনার মত পবিত্র
আর শেষ বেলার সূর্যের মতই স্নিগ্ধ।
আজকের এই অন্তিম সময়ে এসে
বড়ই মনে পড়ছে হে প্রেয়সী তোমার কথা।
কত দিন, কত রাত- ঠিক মনে নেই
তোমাকে দেখিনি অভিশপ্ত এ দু চোখে।
শেষ যেদিন- যে দিন তুমি অভিমানে ভূল বুঝে
চলে গেলে আমা হতে দূরে
তারপর কত কত দিন পেড়িয়ে গেছে।
কত পরিবর্তন হয়েছে এই ধরাধামে।
হয়তবা কত পরিবর্তন এসেছে কিংবা হয়েছে তোমার মাঝে।
আজকের এই শেষ সময়ে এসে
তবে কেন তোমাকে খুব দেখতে ইচ্ছা করছে ?
কেন ইচ্ছে করছে খুব একাত্মে পেতে?
জানি এক জীবনে তোমাকে আর পাব না।
কেন তোমার এ মিথ্যে ভূল? কেন চলে গেলে দূর থেকে দূরে ?

জানালার ‘পরে রক্তিম রক্তাভ আকাশ।
জীবনের শেষ বেলায়, ক্লান্ত অবচ্ছন্ন মনে
আকাশের কাছে কিছু প্রশ্ন থেকে যায়
হে আকাশ- সত্যি কি সে ভেবেছিল আমার শেষ কথা?
সত্যি কি সে ভালোবেসেছিল আমায়?
সত্যিই কি সে আমার অস্তিত্ব অনুভব করেছিল অবারিত অস্রুধারার মাঝে ?
হে আকাশ-
আজকের এই অন্তিম লগ্নে
চুপটি করে থেকো নাকো তুমি।
আকাশ তুমি নিশ্চুপ কেন?
তবে কি আমার প্রিয়ার মত তুমিও ভূল বুঝলে আমায়?

দেয়ালের পরে ঘড়িটা চলছে টিকটিক করে
আমার দেহঘড়িও পাল্লা দিয়ে চলছে তার সাথে-
কিন্তু কতক্ষণ?
নারী। তোমারি জন্য, শুধুমাত্র তোমারই জন্য
তিলে তিলে নিঃশেষিত করেছি নিজেকে।
সিগারেটের ধোঁয়ার মরিচাপড়া কলকব্জাগুলো
এখন বিকল হওয়ার প্রতীক্ষায় আছে।
দেহ ঘড়িও শেষ বেলায় এসে  টিকটিক বাড়িয়ে দিয়েছে পুরোমাত্রায়।

এখন বুকে প্রচণ্ড ব্যাথা হচ্ছে
দেহের হাড় মাংসে যেন
টগবগিয়ে ফুটছে উত্তপ্ত কয়লা।
বালিশে মুখ থুবড়ে নেভানোর চেষ্টা করছি
সমস্ত জ্বালা- ব্যাথা, উত্তপ্ততা।

এখন আমি আগের মতই পড়ে আছি।
একটা তিক্ত অবসাদ-
ঘোলাটে তন্দ্রাচ্ছনতা- গ্রাস করে নিয়েছে আমাকে।
এখন দেহ ঘড়ির সেই গতি নেই
এখন নিভে গেছে সেই আগুন...
শুধু পড়ে আছি নিথর আমি।
পলকহীন দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছি অজানা কোন শূন্যের দিকে।

আমার ঘরের জানালার ‘পরে
রক্তিম রক্তাভ একফালি আকাশ
আকাশের মাঝে একটি প্রিয় মূখ...
একটি প্রিয় মুখ-
অন্য ভুবন থেকে দেখি তোমায়।


(২০০০ ... এই কবিতাটি শ্যামল ভাইয়ের জন্য লিখেছিলাম...
শ্যমল ভাইয়ের জীবনে করুণ এক প্রেম ছিল... ) 

No comments :

Post a Comment