My Personal Blog ...

ভুলু (একটি কুকুরের নাম) এবং মনিব। -১


মফস্বল শহরকে ঘিরে অথবা যে বাজার কে ঘিরে মফস্বল শহরটি গড়ে উঠেছে অনেক অনেক বছর আগেই, সে বাজারের নিতান্ত সাধারণ এক গলিতে ওর জন্ম। ওরা ছিল চার ভাইবোন। শীতের এক রাতে, নোংরা গলির কোনায় অবহেলায় ফেলে দেয়া জীর্ণ চটের বস্তার উপরে ওদের জন্ম হয়। ওদের জন্ম মানে মানুষের মত এত আয়োজন আনুষ্ঠানিকতা কিচ্ছু নেই- স্রেফ বিধাতার করুণার উপর নির্ভর করে বেঁচে থাকার পথে যাত্রা শুরু করা এবং বেঁচে থাকাটাও সে অদৃষ্টের উপরই।

ওদের মা ছিল খুবই রুগ্ন- কিন্তু ওরা বেড়ে উঠল বেশ হৃষ্টপুষ্ট ভাবে। গলির রাস্তা জুড়েই ছিল ওদের বিচরণচার ভাইবোন মিলে শীতের নরম রোদে কখনও এক টুকরো ছেঁড়া কাগজ কিংবা ফেলে দেয়া কাপড়ের টুকরো নিজে জুড়ে দিত খেলা। একবার তাদের মা বাজারের মাংস বিক্রির দোকান থেকে ছোট একটা হাড় নিয়ে এলোবাচ্চাগুলো-তো মহা-খুশিকাঁচা মাংসের স্বাদ ওরা কয়েকবারই পেয়েছে। হাড়টি তুলে নিয়ে একজন দৌড়ে পালাল। বাকি তিনটে বাচ্চা ধাওয়া করল তাদের ভাইকে। চারটি বাচ্চা মেতে রইল খেলায়। ওদের মা কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে বাচ্চাদের খেলা দেখল, তারপর চলে গেল খাদ্যের খোঁজে।

শীতের কষ্টকর দিনগুলি শেষে বসন্ত এলোকিন্তু সৃষ্টিকর্তা বাচ্চাগুলোর ভাগ্যে বসন্তের আলপনা আঁকেন নি, একদিন ট্রাকের তলায় পিষ্ট হয়ে মারা গেল তাদের মা। বাচ্চাগুলো সে কথা জানে না, সারাদিন তারা মায়ের প্রতীক্ষায় রাস্তা ধরে চেয়েছিল। দিন গেল-রাত গেল, ক্ষুধার জ্বালায় অস্থির বাচ্চাগুলো তাদের সীমিত গণ্ডি- সে গলি পেরিয় বাজারের অন্য পথ ধরল পরদিন সকালে।

বাচ্চা চারটি সেদিনই পৃথক হয়ে গেল। এদের মধ্য দুটো বাচ্চা মারা গেল ক্রমশ দুর্বল হয়ে। অন্যদুটো টিকে রইল- ফেলে দেয়া খাদ্যের উচ্ছিষ্ট খেয়ে। এ দুটো বাচ্চার মধ্য একটি ছেলে, অপরটি মেয়ে। প্রকৃতির এ লিঙ্গ পার্থক্যের দরুন ছেলে বাচ্চাটি বেড়ে উঠল মেয়েটির চেয়ে দ্রুত। বাজারের পরিবেশে ইতিমধ্যে সে একটি জিনিস আয়ত্ত করে ফেলেছে- দোকানের সামনে কাউকে কিছু খেতে দেখলে লেজ নাড়িয়ে চুপচাপ সেখানেই দাঁড়িয়ে পড়ত। ছোট বাচ্চাটি দেখতে খুব সুন্দর ছিল। মায়াভরা চোখে তাকিয়ে থাকত মানুষের দিকে কিংবা তার হাতে ধরা পাউরুটি খণ্ডের দিকে। বেশির ভাগই তার দিকে ছুঁড়ে দিত পাউরুটি কিংবা অন্য খাদ্যদ্রব্যের অংশ বিশেষ। ছোট বাচ্চাটি তার(মানুষের) পিছু নিত- আবার ছুঁড়ে দেবে বলে। তারপর হতাশ হয়ে নজর দিত অন্য লোকের প্রতি।

 এই বাজারে বেওয়ারিশ কুকুরের অভাব ছিল না প্রতি শীতেই বাজারের আনাচে কানাচে পঙ্গপালের মত ছড়িয়ে থাকা বাচ্চাগুলোর দেখা মিলে কিন্তু বছর না ঘুরতেই দেখা যেত এদের সামান্যই টিকে আছে প্রতিকূলতার বিরুদ্ধে সংগ্রাম করে সে বাচ্চাটিও টিকে রইল পুরো বাজার ঘিরে তার বিচরণ এখানে তার সমবয়সী আরও অনেক বাচ্চা আছে তাদের সাথে মিলেমিশে-মারামারি করে দিন পারি করে দেয় রাত্রি হলে একা ফিরে যেত সেই পুরনো জায়গায় যেখানে তার জন্ম হয়েছিল সেখানে নোংরা চটে এখনও তার মায়ের শরীরের গন্ধ লেগে আছে এ গন্ধটুকুই ছোট বাচ্চাটি সবচেয়ে ভালবাসে এখনও একাকী রাতে ঘুমের মধ্য কেঁদে উঠে- আশে পাশের অন্য কুকুরগুলো ডেকে উঠে তার সাথে সে ডাকের মাঝে সান্ত্বনা খুঁজে পায়; দু একটি বড় কুকুর তার কাছে চলে আসে, কিছু সময় ছোট্ট বাচ্চাটির পাশে বসে আবার ফিরে যায় নিজের জায়গায় বাচ্চাটি ঘুমিয়ে থাকে ঠিক সূর্য উঠার আগ পর্যন্ত

একদিন, এক ছোট ছেলেকে আইসক্রিম খেতে দেখে তার সামনে দাঁড়িয়ে লেজ নাড়তে লাগল অভ্যাস মত- যদিও সে জানে না আইসক্রিম তার খাদ্য কিনা আইসক্রিম গলে ছেলেটির হাত চুইয়ে মাটিয়ে ফোঁটায় ফোঁটায় পরলে, প্রথমে ছানাটি শুকে দেখল একবার, তারপর চাটতে শুরু করল ছোট ছেলেটির কুকুরের বাচ্চাটি খুব পছন্দ হল দোকান থেকে সে বিস্কুট কিনে খাওয়াল খাওয়া শেষে ছোট কুকুরটি ছেলেটির পিছু পিছু চলতে লাগল খুশি মনে বাজার থেকে অনেকটা দূরে চলে এলো, সেদিকে খেয়ালই নেই ছোট কুকুর ছানাটির

দু তিনটি মোড় পার হয়ে ছেলেটি একটি বাড়ির গেটের কাছে দাঁড়ালো ছানাটিও লেজ নাড়তে লাগল অল্প দূরে দাঁড়িয়ে গেট খুলে ছেলেটি ভিতরে প্রবেশ করে ডান হাত কুকুর ছানাটির দিকে বাড়িয়ে ডাক তুলল, ‘আয়আয়আতু ছোট ছানাটি সামান্য ইতস্তত করে ভিতরে প্রবেশ করলে ছেলেটি গেট লাগিয়ে দিল

সেদিন থেকে বাজারের শত মানুষ- স্বজাতির কোলাহল ছেড়ে ছোট কুকুরটি যেন অন্য জগতে প্রবেশ করল চারপাশে দেয়াল ঘেরা ছোট্ট সে জগত গেটের বাইরে যাবার অনুমতি তার নেই আসলে গেটটি সারাক্ষণই বন্ধ থাকে এবং  ছেলেটি যখন সাইকেল নিয়ে বাইরে বের হত, তাকে কখনও সঙ্গে নিয়ে যেত না- পালিয়ে যাবে এ ভয়ে তার চেয়ে নির্মম কথা, প্রথমদিন থেকেই তাকে বেঁধে রাখা হত এবং এ কাজটি করত ছেলেটি কুকুরের বাচ্চাটিকে ছেলেটি নানা রকম কসরত সেখানের চেষ্টা করত- কিন্তু ছানাটি কিছুই না বুঝে লেজ নাড়ত, অবশেষে ছেলেটি হতাশ হয়ে কুকুর ছানাটির পাছায় দমাদম বাড়ি মেরে গলার দড়ি খুলে তারিয়ে দিত কিন্তু গেটের বাইরে যেতে পারতোনা ছানাটি

ছেলেটির এ অত্যাচারটুকু বাদ দিলে সেখানে বেশ ভালোই ছিল কুকুর ছানাটি এখানে ক্ষুধার যন্ত্রণা নেই- এ কল্যাণে বাচ্চাটি সেখানে রয়ে গেল মাস খানিক কিন্তু তার পরেই তার মধ্য অস্থিরতা ভর করলএ বন্দী জীবনে সে হাঁপিয়ে উঠেছে তাই একদিন গেট খোলা পেয়ে পালাল সে বাড়ি থেকে 
অনেকদিন পর বাজারের আপন পরিসরে গিয়ে ছোট্ট কুকুর ছানাটির খুশি আর ধরে না সে বাজারময় ছুটোছুটি করে বেড়াল সারা সকাল সমবয়সী অন্যদের দেখে ঘেউ ঘেউ করল- শুরু করে দিল খেলা বাজারের অনেকগুলো বড় কুকুরের সাথে তার সখ্যতা ছিল তাদের সাথে দেখা হলে খুশিতে গড়াগড়ি খেতে লাগল মাটিতে তারপর চারপায়ে বসে অদ্ভুত ভঙ্গিমায় লাফিয়ে এগিয়ে গিয়ে সে বড় কুকুরের মুখ চেটে দিত কুই কুই আনন্দের শব্দ তুলে ছোট বাচ্চাটিকে বড় কুকুরগুলো পছন্দ করত- তারও খেলা জুড়ে দিত বাচ্চাটির সাথে

বাজারের চেনা পরিসরে আরও দুইদিন তার কাটল, তারপর তৃতীয় দিনেই চলে এলো সেই বাসায় ছোট ছেলেটি খুব খুশি হল এবার আগের মত দুষ্টুমি ভরে ছানাটিকে মারল না কিংবা নাইলনের মোটা দড়ি দিয়ে বেঁধে রাখল না। এবং সাইকেল নিয়ে সে যখন বাইরে খেলতে যেত পিছু পিছু নিয়ে যেত ছানাটিকেও।  ছেলেটি মাঠে ক্রিকেট খেলত আর সে মাঠের একপাশে বসে থাকা সারি সারি কাকের সাথে খেলা জুড়ে দিত। ঘেউ ঘেউ করে দৌড়ে চলে যেত কাক গুলোর মাঝখানে, কাকগুলো কা কা রব তুলে সামান্য দূরে গিয়ে বসত এবং আবারও সে ছুটে যেত সেখানে। তারপর সন্ধ্যা হলে ছোট ছেলেটির সাইকেলের পিছু পিছু চলে আসত বাসায়।

তিন চারদিন পর ছোট ছানাটি আবার পালাল এবং ফিরে এলো দুদিন পরেই। সপ্তাহ খানিক পর আবার। ছেলেটি কুকুর ছানার এ আচরণে অভ্যস্ত হয়ে গেল, তাই সে আর কিছু বলত না।

মাস খানিক কাটল এভাবেই। তারপর ছোট ছেলেটি বাবা-মার সাথে শহর ছেড়ে চলে গেল অন্যত্র। যদিও ছেলেটি বায়না ধরেছিল কুকুরটিকে সাথে নেয়ার, কিন্তু তার বাবা-মা কোনোভাবেই সায় দিল না এতে। ট্রাকে মালপত্র চাপিয়ে তার চলে গেল। কুকুর ছানাটি ট্রাকের পিছনে ছুটল কিছুদূর, তারপর ফিরে এসে সে বাসার গেটের কাছে বসে রইল সন্ধ্যা পর্যন্ত। কিন্তু তবুও গেট না খুললে কুই কুই শব্দ তুলে বাজারের পথ ধরল। পরদিন সকালেই আবার ফিরে এলো সে বাড়ির গেটের সামনে। সপ্তাহ খানিক পর একদিন গেট খোলা দেখে আনন্দে লাফাতে লাফাতে সে প্রবেশ করল ভিতরে। অপরিচিত দাড়িওয়ালা এক লোককে লাঠি হাতে ছুটে আসতে দেখে সে হতভম্বের মত দাঁড়িয়ে পড়ল, তারপর লেজখানা পিছনের দু পায়ের ফাঁকে ঢুকিয়ে দে ছুট! এক দৌড়ে চলে এলো বাজারে। আর কখনও সেখানে যায়নি কুকুর ছানাটি।

বছর ঘুরে আবার শীত তার কনকনে চাঁদর নিয়ে উপস্থিত হল ধরণীতলে। সেই সাথে কুকুর ছানাটিও তার জীবনসীমার একটি বছর অতিক্রম করে নতুন বছরে পদার্পণ করল। এই এক বছরে অনেকটা বাড়ন্ত হয়েছে তার শরীর এবং বাজারের অন্যান্য কুকুরের সাথে ক্রমশ স্পষ্ট হচ্ছে তার পার্থক্য। মফস্বল শহরের এ বাজারে বেওয়ারিশ নেড়ি কুকুরগুলো বাদে দু চারটি বিদেশী কুকুরও ছিল। বয়সের ভারে সে বৃদ্ধ অস্থি-চর্ম সর্বস্ব পরিত্যক্ত কুকুরগুলো বাজারের অন্যান্য দেশি নেড়ি কুকুরের সাথে মিলেমিশে যখন বংশবৃদ্ধি করে চলে একইভাবে- ফলস্বরূপ নতুনদের মাঝে সৃষ্টি হয় সম্পূর্ণ নতুন ভিন্ন জাত- সংকর। ছোট কুকুরছানাটি ঠিক তাই ছিল।

শীতের দিনগুলো তার কেটে গেল চেনা গণ্ডির বাজারে। বসন্তের শুরুতেই কুকুরছানাটির স্থান হল আবার নতুন এক জায়গায়। একদিন বাজারে তাকে পেট পুরে খাওয়ানো হল, তারপর গলায় দড়ি বেঁধে তোলা হল রিক্সায়। দড়ির প্রান্ত ধরে রিক্সার সিটে বসে নির্বিকার ভঙ্গিতে সিগারেট ফুঁকতে লাগল তার নতুন মনিব। ইতিমধ্যে মনিব কুকুরটির একটি নামও দিয়ে ফেলেছে। কুকুর ছানাটি প্রথমে দু তিনবার বুঝতে পারেনি- তারপর যখন সে বুঝতে পারল, সে নামে সারা দিয়ে লেজ নাড়তে লাগল। সেই ছোট ছেলেটি তার একটা নাম দিয়েছিল- টমি। এবার তার নতুন নাম হল বাঘা। এ নামের অর্থ সে জানে না।

নতুন মনিব কে তার খুব একটা পছন্দ হয়নি। সেই ছোট ছেলেটির মত হাসিখুশি কিংবা মিশুক নয় এ মনিব। সারাক্ষণ কেমন যেন গম্ভীর হয়ে থাকে। একদিন সে আদর করে মনিবের হাত চেটে দিতে চাইল, আর সে কিনা প্রতিত্তুরে লাঠি দিয়ে তার পাছায় দমাদম বাড়ি বসিয়ে দিল! অথচ ছোট ছেলেটির হাত কতবারই সে চেটে দিয়েছে। তাকে মারা দূরে থাক, মাথায় হাত বুলিয়ে আদর করেছে ছেলেটি। আসলে তার এই নতুন মনিব বয়সে চল্লিশ ঊর্ধ্ব। এই বয়সের কারও সাথে তার মত ‘ইতর’ প্রাণীদের ভাব সাধারণত জমে না, যেমনটি ছোটদের বেলায়। অবশ্য ছোটরা অনেক সময় বড়দের চেয়ে নিষ্ঠুর আচরণ করে। তারপরেও ভালবাসা নামক জিনিসটি ইতর প্রাণীদের বেলায়ও সমভাবে প্রযোজ্য। তারাও এর তাৎপর্য বোঝে এবং সভ্যদের থেকে আশা করে।

একবছরের বাঘা তাই নতুন মনিবের বাড়িতে বেশিদিন থাকতে পারল না। দু মাস পরেই আবার চলে এলো বাজারে, তিন মাইল পথ পাড়ি দিয়ে- সেটা ছোট্ট কুকুরটির জন্য রীতিমত অ্যাডভেঞ্চার! মাস দুয়েক পূর্বে যে রাস্তা ধরে তাকে নিয়ে আসা হয়েছিল, সেই পুরনো গন্ধ শুকে শুকে ঠিকঠাক মত হাজির হল সে। পথে তিন চার জায়গার অপরিচিত বড় গ্রাম্য কুকুরের ধাওয়া খেতে হয়েছে তাকে, কিন্তু নেহাতই ছোট বলে বড় কুকুরগুলি তাকে দাতে-নখে আক্রমণ করেনি। ছোট কুকুরটিও বীর পুরুষের (বলুন বীর কুকুরের!) মত লেজ উঁচিয়ে ঘরঘর শব্দ করে তেরে যায়নি, লম্বা লেজখানা দু পায়ের ফাঁকে নামিয়ে উল্টো দিকে ভোঁ ভোঁ দৌড়!

বাজারের পরিবেশে আরও কিছুদিন কাটল কুকুরটির। তারপর তার ভাগ্যে জুটল আরও এক নতুন মনিব, নতুন জায়গায়- নতুন পরিবেশএখানের সবকিছুই তার ভাল ছিল- অবস্থা-সম্পন্ন কৃষকের উচ্ছিষ্ট খেয়ে কুকুরটি বেশ তরতাজা-চেকনাই হয়ে উঠেছিল। কিন্তু এখানেও কিছু দিন পার করার পর তার মন ছুটে গেল সেই বাজারে এবং একদিন চলে এলো সে।

এভাবে আরও পাঁচ-সাত জায়গা ঘুরে অবশেষে শারীরিক পূর্ণতা নিয়ে সেই বাজারের ইতর প্রাণীদের নেতৃত্ব-স্থানীয় একজন হিসাবে নিজের অবস্থান করে নিলো কুকুরটি।  কেননা এই শারীরিক পূর্ণতাই বাজারের অন্য কুকুরগুলি থেকে আলাদা করে তুলেছে তাকে। দেশি নেড়িগুলোর সাথে আকার গঠন কিংবা গাঁয়ের রঙের পার্থক্য পুরোপুরি। শেয়ালের মত খাটো কান কিংবা মুখমণ্ডল, সেই সাথে নাকের আগা থেকে লেজের শেষ মাথা পর্যন্ত বড় বড় সোনালী লোমে আবৃত। লোমগুলো পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন- সূর্যের আলোয় চিকচিক করত। সবচেয়ে দেখার মত ছিল লম্বা লেজখানা। সেখানে ঘোড়ার কেশরের মত বিন্যস্ত লম্বা লোম- যা তাকে আলাদা আকর্ষণীয় করে তুলেছে। খাটো কান দুটো ছিল খুব সুন্দর। খাড়া কান-দুটোর ভিতর ভাগ থেকে একগুচ্ছ লম্বা লোম বেড়িয়ে এমন ভাবে বিন্যস্ত হয়েছে, ঠিক মেয়েরা চুল বাধার পরে সামনে একগুচ্ছ চুল যেমন গোল হয়ে কপালের উপর পেঁচিয়ে থাকে। পায়ের ক্ষুরধার ঈগলের ঠোঁটের মত বাঁকানো নখগুলোর অনেকটাই ঢেকে গেছে সেখানের লম্বা ঘন লোমের পোঁচে। কুকুরটির চোখদুটোও ছিল মায়াভরা। আকার-আয়তনে দেশি নেড়িগুলোর থেকে শুধুমাত্র নয়, ক্ষিপ্ততার বিচারেও ছিল অনেক বেশি এগিয়ে।


সবাই তাই প্রথম দর্শনেই পছন্দ করে ফেলত কুকুরটিকে এবং সম্পূর্ণ নিজের করে পাওয়ার জন্য বাড়িতে নিয়ে যেত- কিন্তু বাজারের গণ্ডী থেকে কোনদিনই দূরে থাকতে পারেনি সে। প্রতিবারই চলে এসেছে এখানে। অবশ্য কিছুদিন পরপরই সে গিয়ে হাজির হত পুরনো কোন মনিবের ঠিকানায়। সেখানে দু চার দিন কিংবা সপ্তা-খানিক থেকে চলে আসত বাজারেএভাবে বাজারের আশেপাশের অনেকদূর পর্যন্ত অনেকগুলো ঠিকানা তার পরিচিত হয়ে উঠেছিল। কিন্তু কোন ঠিকানাই তাকে একান্ত করে সেখানে রাখতে পারেনি, যদিও সম্পর্কটা ঠিকই রয়ে গেছে একইভাবে।  

ভুলু (একটি কুকুরের নাম) এবং মনিব। -২